Sunday, February 8, 2015

ইউক্রেন/ক্রিমিয়া সংকট

ক. ইউক্রেন/ক্রিমিয়া সংকটের পটভূমি ও স্বরুপ আলোচনা করুন।
খ. ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সাথে অন্তর্ভূক্তি রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ সম্পর্কে কি ধরণের প্রভাব ফেলবে? আলোচনা করুন।

উত্তর: ক

ইউক্রেন/ক্রিমিয়া সংকট:
ইউরোপিয়ান দেশ ইউক্রেনের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র ও উপদ্বীপের নাম ক্রিমিয়া। ছোট এই উপদ্বীপটির অবস্থান কৃষ্ণসাগরের উত্তর উপকূলে। আয়তন ২৬ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। বসবাসরতদের বেশির ভাগই রুশপন্থী বা কমিউনিস্ট। ৬০ বছর আগে ক্রিমিয়া ছিল রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত একটি অঞ্চল। ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত নেতা নিকিতা খ্রুশ্চভ ক্রিমিয়া উপদ্বীপটি উপহার হিসেবে লিখে দিয়েছিলেন ইউক্রেনকে। বলতে গেলে তখন থেকেই রুশদের মধ্যে অসন্তোষের শুরু। এরপর বিভিন্ন সময় রাশিয়া ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেও সফল হয়নি। বর্তমান সমস্যার সূত্রপাত হয় ইউক্রেনের রুশপন্থি প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর গত নভেম্বর ২০১৩ থেকে ।ইউক্রেনের মস্কোপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থী প্রতিবাদ বিক্ষোভের জেরে পদত্যাগে বাধ্য হন। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০০০ সালে প্রথম রাশিয়ার ক্ষমতায় বসার পর থেকেই ন্যাটো জোট বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রভাব থেকে সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোকে মুক্ত রাখার পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত। নিকট প্রতিবেশী ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ যাতে বড় একটি বাণিজ্য চুক্তি করে ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ না হয়ে ওঠেন সে জন্যই পুতিন দেড় হাজার কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার টোপ দিয়েছিলেন। কিন্তু ইউরোপপন্থীদের আন্দোলনে পতন ঘটে ইয়ানুকোভিচের।এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়ান বাহিনী ক্রিমিয়াকে দখলে নিতে গেলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিকে বিশ্বগণমাধ্যম 'ক্রিমিয়া সংকট' হিসেবে অভিহিত করেছে।

এক সময় ক্রিমিয়ার প্রধান জনগোষ্ঠী ছিল তুর্কি বংশোদ্ভূত তাতার। স্টালিনের আমলে তাদের উৎখাত করে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয় রুশদের। বর্তমানে উপদ্বীপটির মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ তাতার, ২৫ ভাগ ইউক্রেনীয় এবং ৬০ ভাগ রুশ। দেশটি কী ইউক্রেনের সঙ্গে থাকবে না রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে- এই প্রশ্নে এক গণভোট অনুষ্ঠিত হয় ১৬ মার্চ ২০১৪। ভোটে ক্রিমিয়ার ৯৭ ভাগ জনগণ রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত হওয়ার পক্ষে রায় দেন। এ রায়কে পুঁজি করে ক্রিমিয়ার পার্লামেন্ট ১৭ মার্চ ২০১৪ নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে এবং রুশ ফেডারেশনে যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানায়।তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই গণভোটের বৈধতা দেয়নি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকার তীব্র চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে রুশ ফেডারেশনের সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত আইনে স্বাক্ষর করে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার একীভূত অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গত ২১ মার্চ রাশিয়ার পার্লামেন্টের ফেডারেল অ্যাসেম্বলির উচ্চকক্ষে ক্রিমিয়ার অন্তর্ভুক্তকরণ চুক্তিটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ফলে আইনসম্মত উপায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিমিয়া এখন রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর মধ্য দিয়ে ক্রিমিয়া সংকটের স্থায়ী কোনো সমাধান হবে কি না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েই গেছে।


উত্তর: খ

ক্রিমিয়া সংকট প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ বনাম রাশিয়া সম্পর্ক:

ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার ওপর দুই দফা নিষেধাজ্ঞা জারির পর কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও সুইজারল্যান্ডও এতে শরিক হয়। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়াও তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলো থেকে খাদ্যসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা নিষেধাজ্ঞার পরিসর আরও বৃদ্ধি করবে। এভাবে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা আরোপ অব্যাহত থাকলে তা অচিরেই পুরোপুরি বাণিজ্যযুদ্ধে রূপান্তরিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তখন রাশিয়ার সীমান্তে মোতায়েনকৃত মার্কিন সামরিক বাহিনী ও রাশিয়ার সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে কী অবস্থা দাঁড়াবে? রাশিয়া ইতিমধ্যে ন্যাটোর বিরুদ্ধে তার দেশে কামানের সাহায্যে সাবানের বুদ্বুদ নিক্ষেপের অভিযোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে ২০ হাজারের বেশি সৈন্য ও অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে। রাশিয়ার সৈন্যরা পূর্ব ইউক্রেনে বিদ্রোহীদের সমর্থনে মানবিক সাহায্যের ছদ্মাবরণে ঢুকে পড়তে পারে বলেও তারা মনে করে। এভাবে পাল্টাপাল্টি সামরিক শক্তি সমাবেশ ও তৎপরতার অভিযোগ শেষ পর্যন্ত কি পুরোপুরি যুদ্ধে রূপ নেবে? প্রতিনিয়ত যেভাবে উত্তেজনার পারদ চড়ছে তাতে খালি চোখে সেটাকেই ঘরের দুয়ারে ঘনিয়ে ওঠা বিপদ মনে হতে পারে।

রাশিয়া অবশ্যই চাইবে না ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তার জন্মের মতো আড়ি হয়ে যাক। সে কারণে গোপনে পূর্ব ইউক্রেনের রুশভাষী বিদ্রোহীদের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের সাহায্য প্রদান করলেও তারা মার্কিন প্ররোচনায় উত্তেজিত হয়ে ইউক্রেন আক্রমণ করতে না-ও যেতে পারে। গবেষক পল ক্রেইগ রবার্টস অবশ্য তাড়াতাড়ি রাশিয়াকে ইউক্রেনের পূর্বাংশ দখল করে নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও পক্ষপাতী। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর বিরুদ্ধে কতিপয় ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও রাশিয়া ইউরোপে জ্বালানি তেল ও গ্যাস রফতানি বন্ধ করতে যাবে বলে মনে হয় না। ইইউ জ্বালানি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি নিজেদের স্বার্থেই। তারা জ্বালানি প্রযুক্তি রাশিয়ায় রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু রাশিয়া কি এক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের চেষ্টা বেশ আগে থেকেই শুরু করেনি! রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকা ইউরোপকে কাজে লাগাতে পারে, এ আশঙ্কা থেকে থাকবে। সে কারণে তারা অনেক ক্ষেত্রেই পশ্চিমা নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে সচেষ্ট ছিল এবং এখনও রয়েছে। এটা অনেক দিন থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বস্তুত ভস্ম থেকে উঠে দাঁড়ানো রাশিয়ার আমেরিকার হেজিমনির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা ওয়াশিংটনের কাছে স্পষ্ট হওয়ার পর তারা রাশিয়াকে চেপে ধরার কৌশল নেয়। আর সেটা ভালোভাবেই টের পায় রাশিয়া।

রাশিয়া-ইইউ পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার ফলে উভয়পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলা যায়। উভয়ের মধ্যে মোট বাণিজ্যের (আমদানি-রফতানি) পরিমাণ ২০১২ সালে চারশ' বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি ছিল। উভয় দেশের ব্যবসায়ী ও সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে। যুদ্ধজাহাজ তৈরি পর্যন্ত বাণিজ্যিক সহযোগিতা বিস্তৃত। এভাবে চলতে থাকলে ইউরোপ এক সময় রাশিয়ার নির্ভরযোগ্য সঙ্গীতে পরিণত হবে, এ চিন্তা যুক্তরাষ্ট্রের থাকতেই পারে। আর রাশিয়া যদি ইউরোপকে পেয়ে যায় তাহলে তাকে চ্যালেঞ্জ জানানো অসম্ভব নয় মনে হতে পারে। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চেষ্টা করবেই। বৃহৎ শক্তিবর্গের দাবা খেলায় এ ধরনের হিসাবি চাল তো চলতেই পারে। যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে কিছুটা সফল। সে মালয়েশিয়ার বিমান ট্র্যাজেডিকে কেন্দ্র্র করে ইউক্রেন নিয়ে ইউরোপকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে সমর্থ হয়েছে। অথচ যাত্রীবাহী বিমানটি ভূপাতিত করার সঙ্গে রাশিয়া বা তার সমর্থিত বিদ্রোহীরা জড়িত রয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বরং বিমানটিকে জঙ্গি বিমান থেকে মেশিনগানের গুলি ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ধ্বংস করা হয়েছে, এই মত জোরালো হচ্ছে। নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিকেও যুক্তরাষ্ট্র আমলে নিচ্ছে না। এতে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে। এটি ইউক্রেনের একটি স্যাবোটাজ কর্মর্র্ নয় তো!

বিশ্ব জায়ান্টদের পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা বিশ্বে গড়ে ওঠা পরস্পর নির্ভরশীল অর্থনৈতিকসহ বহুবিধ সম্পর্ককে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এতে আমরাসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া এবং ইইউ উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে ক্ষেত্রওয়ারি নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার তাৎক্ষণিক ক্ষতিটা বেশি হবে। আর দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস পাবে। কারণ ব্যাংক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা ডলার থেকে সরে গিয়ে হংকং ডলার ও চীনের মুদ্রা রিমিমবি বা য়ুয়ান এবং রুবলকে ব্যবহার করবে। চীনের ওপর তার নির্ভরতার পরিমাণ এতে অনেকগুণ বেড়ে যাবে। চীন এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখেও রাশিয়াকে অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমর্থন করবে কি-না সে ব্যাপারে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মধ্যে সন্দেহ থাকতে পারে। তবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থাকে পরিবর্তনের জন্য রাশিয়া ও চীনের মধ্যে প্রায় একযুগ থেকেই সমঝোতা ধীরে ধীরে বন্ধুত্বে পরিণত হয়েছে। এই দুই শক্তির নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা। বিশ্বের প্রধান বাণিজ্যিক শক্তি ও দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন রাশিয়ার স্ট্র্যাটেজিক অংশীদার হওয়ায় তার পক্ষে পশ্চিমা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার ধকল কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতে পারে। এই নিষেধাজ্ঞাকে হিসাব করেই রাশিয়া চীনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি প্রায় অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলারের জ্বালানি সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদন করেছে। সামরিক খাতেও রাশিয়া-চীন সহযোগিতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়ার আরেক হাত তো ব্রাজিলসহ লাতিন আমেরিকার দিকে প্রসারিত। ভারতও এতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের মওকা পেতে পারে।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সংঘাতে জড়ানোর মতো অবস্থা ইইউর নেই। যুক্তরাষ্ট্রও হাজারবার ভাববে। ব্রিক দেশগুলো ইতিমধ্যেই বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ন্যায্য হিস্যা না পেয়ে নিজেরাই ব্রিক উন্নয়ন ব্যাংক ও রিজার্ভ ফান্ড গড়ে তুলেছে। এর ফলে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের খবরদারি কমবে। এটি যদি সঠিকভাবে কাজ করে তাহলে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে ন্যায্য হিস্যা প্রদান করতে বাধ্য হবে। এতে উন্নয়নশীল দেশগুলোও উন্নয়নের একটির পর একটি সোপান অতিক্রম করে উন্নত দেশের সারিতে ক্রমাগতভাবে জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ পাবে।

বস্তুত ব্রিকস দেশগুলো গোটা বিশ্বব্যবস্থাকে নতুন অবয়ব দিতে চাচ্ছে বা জেগে ওঠা বহু মেরুর বিশ্বব্যবস্থাকে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দুনিয়া মেনে নেয় সে চেষ্টাই করছে। আর আমেরিকা চাচ্ছে তার আড়াই দশকের একচ্ছত্র আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে। এখানেই স্বার্থের সংঘাত শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে সামনাসামনি লড়াইয়ের বিপদ ঘনিয়ে তুলছে। রাশিয়া-আমেরিকা একটা মোকাবেলার পরিস্থিতিতে গেলে এ দুই দেশের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ইউরোপের। এই বোধ নিশ্চয়ই ইউরোপের রয়েছে। দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধের পরিণতি কী ভয়াবহ হয়েছিল তার দাগ মুছে যাওয়ার নয়। তাই যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে যুদ্ধের মধ্যে টেনে নামাতে যতই চেষ্টা করুক না কেন, ইউরোপ চাইবে না রাশিয়া তাতে পা দিক। আর রাশিয়াও সংঘর্ষ বাধানোর মতো অবস্থা সৃষ্টির মার্কিন চেষ্টাকে ভণ্ডুল করে দেওয়ার জন্য ইউরোপকে সঙ্গী হিসেবে এখনও পেতে চায়। সেজন্যই রাশিয়ার ইইউর ওপর নিষেধাজ্ঞাটা এক অর্থে প্রতীকী বলা যায়। রাশিয়া এখনও ইউরোপের দিকে এক হাত বাড়িয়েই রেখেছে। তবে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার জেরে উভয়ের মধ্যে যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা দূর হবে কী করে, সেটা বিরাট প্রশ্ন হয়েই থাকবে।


রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ইউরোপের নির্ভরতা অদূর ভবিষ্যৎ কাটার সম্ভাবনা নেই। যুক্তরাষ্ট্র যতই আশার বাণী শোনাক না কেন, তার পক্ষে নবলব্ধ পাথুরে তেল ও গ্যাস (শেল অয়েল অ্যান্ড গ্যাস) ইউরোপে রফতানি করা সম্ভব হবে না। তারা তো ২০৩৫ সালের আগে জ্বালানিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারবে না বলে নিজেরাই ঘোষণা দিয়েছে। এই তেল বের করার জন্য খরচ কিন্তু কম নয়। বরং জ্বালানি তেল উত্তোলন করতে সৌদি আরবে যেখানে ব্যারেলপ্রতি ১০ ডলার লাগে সেখানে পাথুরে তেলে খরচ পড়ে কয়েকগুণ বেশি। তদুপরি এই তেলে লাভ অনেক কম বিধায় ইতিমধ্যেই এর বিরুদ্ধে তেল ও গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অসন্তোষ প্রকাশ করা শুরু করেছে। অনেকের লাভের গুড়ের হদিস পিঁপড়ে পর্যন্ত পায়নি!

No comments:

Post a Comment